চট্টগ্রাম ছাড়ার সময় পুলিশের এসপি বাবুল আক্তার বলেছিলেন, তার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় ও ঘটনার সাক্ষী চট্টগ্রাম। কিন্তু, তখনো তিনি জানতেন না, এই চট্টগ্রামেই ঘটতে যাচ্ছে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজিক ঘটনা।
সকলকে শুভ কামনা জানিয়ে চট্টগ্রাম ছেড়েছিলেন বাবুল আক্তার। এক সপ্তাহের মাথায় সেই চট্টগ্রামে তাকে ফিরতে হলো জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডির পর। ছেলের সামনে হত্যা করা হয়েছে তার স্ত্রীকে।
চাকুরি জীবনের বড় সময়, প্রায় আট বছর, চট্টগ্রামে কাটিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল। ২০০৮ সালের মার্চে র্যাব থেকে বদলি হয়ে সিএমপিতে গিয়েছিলেন। এরপর কোতোয়ালী জোন, হাটহাজারী সার্কেল, কক্সবাজার জেলা ঘুরে আবারও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান পুলিশে।
‘শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ফিরে আবার সিএমপিতেই। চট্টগ্রাম অঞ্চলেই চাকরিকালীন সময়ে আমার দুটি সন্তানের জন্ম হয়েছে। এখানে থেকেই পদোন্নতি পেয়েছি,’ গত ৩০ মে চট্টগ্রাম ছাড়ার সময় ফেসবুক পোস্টে এভাবেই চট্টগ্রাম নিয়ে আবেগের কথা জানিয়েছিলেন বাবুল আক্তার।
তিনি লিখেছিলেন: সিএমপি থেকে বিদায় নিচ্ছি। জনস্বার্থে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে সংযুক্ত হবার আদেশ হয়েছে। যেখানেই থাকি মিস করবো প্রিয় চট্টগ্রামকে। মিস করবো চট্টগ্রামের মানুষদের, যাদের ভালোবাসা আমার কর্মজীবনের প্রেরণা। আমার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী এই চট্টগ্রাম।
জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী সেই চট্টগ্রাম তার জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনারও সাক্ষী হয়ে গেল।
সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার থেকে এসপি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে রিপোর্ট করার পর সহকারি আইজি হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন তিনি। পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) এসপি হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তার। তিনি ঢাকায় চলে আসলেও দুই সন্তানসহ স্ত্রী মাহমুদা খানম চট্টগ্রামেই ছিলেন।
চট্টগ্রাম ছাড়ার সময় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাবুল আক্তার বলেছিলেন, কাজ করতে গিয়ে সহকর্মী, জনপ্রতিনিধি, সংবাদকর্মী ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি। চেষ্টা করেছি সর্বদা সততা ও ন্যায়ের সাথে কাজ করতে, সত্যের পক্ষে থাকতে।
সঙ্গে তিনি একথাও বলেছিলেন: (তবে) পুলিশের চাকরিতে সকলকে সন্তষ্ট করা সম্ভব নয়। হয় অভিযোগপত্র, না হয় চূড়ান্ত রিপোর্ট। এর মাঝামাঝি কোন অবস্থানে থাকার সুযোগ নেই। সে কারণে অনেকের বিরাগভাজন হয়ে থাকতে পারি। তবে এতটুকু বলতে পারি নিজ স্বার্থের জন্য কিছু করিনি।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে সেজন্য ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেছিলেন, জীবনের আটটি বছর কেটেছে ভালোলাগার চট্টগ্রামে। আবার দেখা হবে।
সেই চট্টগ্রামের সঙ্গে তার আবার দেখা হলো প্রিয়তম মানুষটিকে হারানোর পর। ঢাকায় আসার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি আবার যখন চট্টগ্রামে গেলেন তখন নিথর হয়ে আছে তার স্ত্রী, পাশে চোখের জলে ভেসে যাওয়া দুই সন্তান। চ্যানেল আই
পাঠকের মতামত